রোজার নিয়ত

বাংলা নিয়ত : আমি আগামী দিন বরকতময় রমযান মাসের ফরয রোযা তোমার উদ্দেশে রাখার নিয়ত করলাম। হে আল্লাহ্! সুতরাং মাহে রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব। মাহে রমজান


    মাহে রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব

















    প্রতি বছর রমজান মাসে মুসলিমরা রোজা রাখে। রোজাকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় সাওম, যার অর্থ বিরত রাখা। রোজার দিনে রোজাদাররা কোনো জিনিস খাওয়া বা পান করা থেকে বিরত থাকে। শুধু তাই নয়, রোজা রাখলে খারাপ কথা, খারাপ কাজ এবং খারাপ চিন্তা করা যায় না ।



    রোযার নিয়ত।


    نويت أن أصوم غدا من شهر رمضان المبارك قرض لك يا الله فتقبل منى انك انت السميع العليم.

    উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন্ আছুমা গাদাম্ মিন্ শাহরি রামাদ্বোয়ানাল মুবা-রাকি ফারদুল্লাকা ইয়া-আল্লাহু ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আন্ তাস্সামীউ’ল ‘আলীম্‌ ।


    বাংলা নিয়ত : আমি আগামী দিন বরকতময় রমযান মাসের ফরয রোযা তোমার উদ্দেশে রাখার নিয়ত করলাম। হে আল্লাহ্! সুতরাং তুমি আমার নিকট থেকে কবুল কর। নিশ্চয় তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

    যদি দিনের বেলায় দুপুরের পূর্বে নিয়ত করতে হয়, তবে (অছুমা গাদাম) এর পরিবর্তে” । (আছুমাল্ ইয়াওমা) পড়তে হয়।





    এভাবে নামাজ যে শিক্ষা প্রতিদিন পাঁচবার আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, রোজা বছরে একবার একমাস ধরে তা প্রতি মুহুর্তে স্মরণ করিয়ে দেয়। এ হলো মহান আল্লাহর হুকুম-আহকাম মানার জন্য প্রস্তুত হওয়ার বার্ষিক ট্রেনিং প্রোগ্রাম। পুরো একমাস এভাবে কঠিন সাধনা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। মজার ব্যাপার হলো- রোজা রাখা শুধু আমাদের জন্যই যে ফরজ তা নয় । আমাদের প্রিয় নবিজির পূর্বেও যে সকল নবি ছিলেন তাঁদের অনুসারীদের জন্যও রোজার বিধান ছিল ।

    আল্লাহ তাআলা বলেন।

    يأيها الذين امنوا كتب183 عليكم الصيام كما كتب على الذين من

    قبلكم لعلكم تتقون

    ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন— ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর । যাতে করে তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো।' সূরা আল বাকারা : ১৮৩

    কুরআনের এই আয়াত থেকে রোজার উদ্দেশ্য কী তা জানা যায়। কেউ ভালোভাবে, ভালো নিয়তে রোজা রাখলে তার মধ্যে পরহেজগারিতার গুণ সৃষ্টি হয়। পরহেজগারিতা কী? দুনিয়ার সব লোভ-লালসা ও খারাপ কাজ থেকে নিজকে দূরে রাখার নাম পরহেজগারিতা।

    রোজা আল্লাহভীতি ও আল্লাহপ্রেম সৃষ্টি করে।


    রোজার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আল্লাহভীতি ও আল্লাহপ্রেম সৃষ্টি হয়। একটু খেয়াল করে দেখুন, রোজার দিনে মানুষ যা কিছু ভালো কাজ করে তা কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে করে না। একমাত্র আল্লাহর জন্যই সবকিছু করে। সামান্য কিছু লুকিয়ে খেলে, কেউ কি তা দেখতে পারবে? খারাপ কিছু চিন্তা করলে কেউ কি তা জানতে পারবে? কিন্তু যে রোজা রাখে সে এটা বিশ্বাস করে— কোনো মানুষ না দেখলেও আল্লাহ সবকিছু দেখেন, জানেন ও শোনেন। এভাবে আল্লাহকে স্মরণ করেই সে সারাদিন কষ্ট করে। প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগলেও কিছুই খায় না। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ভালো কাজ করে এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে । রোজা রাখলে আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়।

    রোজা ইচ্ছাশক্তি বাড়ায়।

    রোজা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। মানুষ সাধারণত একটু আরাম চায়। একটু আয়েশ করে থাকতে চায়। ভালো খেতে চায় এটা স্বাভাবিক। কিন্তু জীবনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য এ আগ্রহকে সব সময় সীমার মধ্যে রাখতে হয়। এজন্য প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি। রোজা এই ইচ্ছাশক্তিকে বাড়িয়ে দেয়। মনের ভেতরে তৈরি হয় দৃঢ় খোদাভীতি। আল্লাহ সব জায়গায় আছেন, সব কিছু দেখছেন— এই বিশ্বাস অন্তরে মজবুত হয়। আখিরাতের জীবনের ওপর ঈমান হয় দৃঢ় । আল্লাহ ও রাসূলের আদর্শের প্রতি ভালোবাসা হয় আরও গভীর। আল্লাহর বিধান পালনের কর্তব্য অনুভূতি হয় বলিষ্ঠ

    রোজা ভ্রাতৃত্ব বাড়ায়।

    রমজান মাস এলে সব দেশের মুসলিমরা রোজা রাখে। পৃথিবীর মুসলমানরা এক আল্লাহর নির্দেশে, একই নবির দেখানো নিয়মে রোজা পালন করে। এর ফলে মুসলিমদের মনে ভ্রাতৃত্বের অনুভূতি জেগে ওঠে। দুনিয়ায় আল্লাহর বিধিবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য যে ঐক্যশক্তির প্রয়োজন— তারই অনুশীলনে পুরো এক মাস মুসলিম জাতি ব্যস্ত থাকে ।


    খাপ খাইয়ে চলা।

    আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন- জীবনের সকল ব্যাপারে খাপ খাইয়ে চলার মতো মানসিক অবস্থা, প্রজ্ঞা ও কৌশল। রমজান মাসে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের পরিবর্তন ঘটে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে মহৎ উদ্দেশ্যে গড়ে তোলার খাতিরে সকল পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার মানসিকতার সৃষ্টি হয় এই মাসে।

    মৌখিক গুণাবলির লালন।

    লক্ষ করলে দেখতে পাব, মানব জীবনে উন্নতির জন্য যেসব ব্যবহারিক ও মৌলিক গুণাবলি প্রয়োজন- রোজা সেসব গুণাবলি বিকাশে সাহায্য করে। কর্তব্যের প্রতি অবিচলতা, ধৈর্য, একাগ্রতা, কষ্ট সহিষ্ণুতা, প্রদর্শনেচ্ছা পরিহার নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলা— এইসব মৌলিক গুণাবলি রোজার মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। মোটকথা দুনিয়ায় নেতৃত্ব দানের জন্য মুসলমানদের মধ্যে যেসব আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক মৌলিক গুণাবলি প্রয়োজন- তারই সাধনার জন্য রোজার মতো এক সুন্দর ইবাদত মুসলিম জাতির জন্য ফরজ করা হয়েছে। মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নিঃসন্দেহে এ এক অপূর্ব নিয়ামত।

    রোজা সহানুভূতিশীল করে।

    ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় যে কষ্ট তা রোজাদাররা উপলব্ধি করতে পারে। ফলে সমাজের ধনীরা দারিদ্র্যের কষ্ট হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারে। ফলে সমাজে সহানুভূতি ও সহমর্মিতার গুণাবলি বিকশিত হয় ।

    রোজার অন্যান্য উপকার।

    এ ছাড়াও রোজা রাখলে স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও বেশ কিছু উপকার হয়। শরীরের চর্বিজাতীয় উপাদান কমে যায়। দেহের জন্য ক্ষতিকর অনেক জীবাণু এবং রাসায়নিক পদার্থ যেমন- ইউরিক এসিড প্রভৃতির পরিমাণ কমে যায়। এভাবে রোজার অনেক উপকার লক্ষ করা যায়। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য এটা নয়। রোজা রাখার সবচেয়ে বড়ো উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহর হুকুম মানা এবং তাঁর অনুগত গোলাম হওয়া ।



    LikeYourComment